শুক্রবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১২

জন্মদিন


 
জীবনে কেবল একবারই কারো জন্মদিনে উপস্হিত থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়ি। স্কুলের এক বন্ধু, যার বাবা চা-বাগানের কোন কর্মকর্তা ছিল তার জন্মদিন। গিয়ে দেখি আমার বন্ধুটির মাথায় চানাচুরঅলার টুপি পড়িয়ে সঙ সাজিয়ে বিশাল এক কেকের সামনে ছুরি হাতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কেক কাটা ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নেভানো এবং সমবেত ইংরেজী গান গাওয়া ইত্যাদি দৃশ্যগুলিকে খুবই অরুচিকর ও হাস্যকর লেগেছিল। ভাল লেগেছিল কেবল ঘরের ভেতর টাঙানো রঙীন বেলুনগুলো কেননা রঙীন বেলুন কেনার মতো সামর্থ্য তখন আমার ছিলনা।

বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১২

বালা কাপানি


বালা কাপানি। বালা কাপানি হলো কৃষিনির্ভর মণিপুরি সমাজের একটি ঐতিহ্যবাহী কৃষি অনুষঙ্গ। যৌথ কৃষিপদ্ধতি মণিপুরিদের আদিম স্বয়ংসম্পূর্ণ সমাজব্যবস্থার অংশ ছিল। প্রাকৃতিক ভূমিকে যৌথ প্রয়াসে বাসভূমি ও চাষভূমিতে পরিণত করে চাষবাস এবং উৎপাদন প্রথায় ভোগ বন্টনও ছিল সাম্যভিত্তিক। লকেই-সাগেই-শিংলুপ ভিত্তিক সমাজে একমসয় ব্যক্তিকে ছাপিয়ে যৌথ চেতনাই প্রবল ছিল; পরস্পরের প্রতি সাহায্য সহযোগিতা ছিল একেবারেই ব্যক্তিস্বার্থ বিবর্জিত। মণিপুরিদের আদিধর্ম 'আপোকপা' কঠোরভাবে এই যৌথচেতনার অনুষঙ্গী। সেই স্বয়ংসম্পূর্ণ সমাজব্যবস্থা আজ নেই, কিন্তু যৌথ চেতনা আজো বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। এখনো খেতখামার বা গেরস্তালি কাজে কিংবা ঘরদোর তৈরীতে তারা বিনা পারিশ্রমিকে পরস্পরকে সাহায্য করে থাকে। এ সমাজে ব্যক্তিচেতনা যৌথচেতনাকে পুরোপুরি গ্রাস করেনি তার উদাহরন হলো বালা কাপানি। বালা কাপানির মুল উদ্দেশ্য গৃহস্থকে ধান কাটায় সাহায্য করা। মুলত তরুন কৃষক ও কৃষানীরা দল বেঁধে 'বালা' গঠন করে। বালাগুলো গ্রাম থেকে গ্রামে এমনকি দুর-দুরান্তেও ধান কাটতে যায়। মণিপুরি গৃহবধুরা বালা নিয়ে নিজেদের বাপের বাড়ীতে সাহায্য করতে যায়। ধান কাটা শেষ হলে বালা দলটিকে 'বান্দারা' বা ভুড়িভোজ খাইয়ে আপ্যায়ন করার নিয়ম। ছবিটি Tarini Singha এর সৌজন্যে পাওয়া।

মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১২

লেহু

 


লেহু। মণিপুরিদের সবচেয়ে প্রিয় শাক। সিলেটিরা বলে লাইশাক। গাছ আর ফুল দেখতে সরিষা গাছের মতো, পার্থক্য হলো বড় হলে পাতাগুলো অনেক প্রশস্ত হয়ে যায়। স্বাদও কিছুটা সরিষা শাকের মতোই তবে ঝাঁঝ সরিষা থেকে অনেকগুণ বেশি। কাঁচা লাইশাক মুখে দিলে ঝাল লাগে।

লাইশাক ভেজে খাওয়া যায়। ভর্তা খাওয়া যায়। আলু বেগুন বা অন্য সবজির সাথে মিলিয়ে লাবড়া বা ঙউথং খাওয়া যায়। মণিপুরিরা খাবারের সাথে কাঁচা লাইশাকের কচি ডগা কামড়ে খেতে পছন্দ করে। লেহুর কচি ডগার সাথে সেদ্ধ আলু আর শুটকি মিশিয়ে তৈরি হয় মণিপুরি সালাড সেঞ্চু।মাছের সাথে বিশেষ করে বোয়াল মাছের সাথে লাইশাকের রান্না তুলনাহীন। লাইফুল দেখতে হলুদ এবং অসাধারন সুন্দর।

ঢাকার কোন বাজারে এই শাক পাওয়া যায় না এরচেয়ে দুঃখের ব্যাপার আর কি হতে পারে?

শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১২

দুর্বলদের পাশে দাঁড়ানোই মানবতা

পরপর ঘটে যাওয়া দুইটি ঘটনায় মনটা প্রচন্ড বিষন্ন হয়ে আছে। প্রথমটি কমলগঞ্জে মণিপুরি শিক্ষক রবীন্দ্র কুমার সিংহের খুন হওয়া। পুজামন্ডপ থেকে ফেরার পথে স্ত্রী ও দুই শিশুর সামনে সিএনজি থেকে নামিয়ে গুলি করে মারা হয় রবীন্দ্রকে। ছেলেটি জামার পকেট থেকে পুজায় জমানো ৪০ টাকা বের করে মুখোশধারী সন্ত্রাসিদের দিয়ে বলে এগুলো নিয়ে তার বাবাকে ছেড়ে দিতে। ছোট ছেলেটির আব্দার সন্ত্রাসীরা রাখবে কেন? দ্বিতীয়টি রাউজানে মারমা নারীর ধর্ষিত হওয়া। হলদিয়া রাবার বাগান এলাকায় স্বামীকে বেঁধে রেখে তার সামনেই গর্ভবতী মারমা নারীটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে যুবলীগের ৪ সন্ত্রাসী। রাস্তাঘাট বেডরুম দুই জায়গাতেই নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থ রাষ্ট্রের ভুমিকা নিয়ে কথা বলতে গেলে কিছু নাগরিক হয়তো প্রশ্ন তুলবেন এরকম ঘটনা তো দেশের সবখানেই অহরহ ঘটছে সেসব নিয়ে বিমর্ষ হন না কেন। সংখ্যাগরিষ্ট ও সংখ্যালঘু, নিপীড়ক ও নিপীড়িত, জাতি ও উপজাতি, সবল ও দুর্বল পার্থক্যগুলো তো রাস্ট্রই ঠিক করে দিয়েছে ভাই। আমরা নিজেরা না বললে কে এসে বলে দেবে আমাদের দুঃখ-কষ্ট-গঞ্ছনা-দুর্দশার কথা? দুর্বলদের পাশে দাঁড়ানোই তো মানবতা।

বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১২

ELA আয়োজিত বিপন্ন ভাষামেলায় বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি

 


অনেক খারাপ খবরের ভীড়ে আজ একটি ভাল খবর শেয়ার করি। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত বিপন্ন ভাষামেলার আলোচনা সেশনে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনপদের একটি ভাষা স্হান পেয়েছে। ভাষাটির নাম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি। পৃথিবীর বিপন্ন ভাষাগুলোকে রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে নিউইয়র্কে পালিত হয়েছে বিপন্ন ভাষামেলা। বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোকে নিয়ে কাজ করা এনডেঞ্জারড ল্যাঙ্গুয়েজ এলায়েন্স (ELA) গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরীতে এই ভাষামেলার আয়োজন করে। বিপুল সংখ্যক আগ্রহী দর্শক, ভাষাকর্মী ও ভাষাতাত্বিকের উপস্হিতিতে ভাষামেলায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিপন্ন ভাষাসমুহের প্রতিনিধিরা তাদের ভাষার পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন। বাংলাদেশ থেকে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষার প্রতিনিধিত্ব করেন উত্তম সিংহ। অনলাইনভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপ বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ডিসকাশন ফোরাম (BMDF) এবং পৌরি ইন্টারন্যাশনাল এর সক্রিয় তৎপরতায় ভাষামেলায় বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। উল্লেখ্য বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষাকে ইতিমধ্যে UNESCO এনডেঞ্জারড ল্যাঙ্গুয়েজ ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করেছে।

উত্তম সিংহ তার বক্তব্যে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষার বৈশিষ্ঠ্য এবং অপরাপর ভাষাসমুহের সাথে এই ভাষার তুলনামুলক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন ভাষভিত্তিক এথনোলোগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে প্রায় ৪০,০০০ ভাষিক সংখ্যালঘু বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষায় কথা বলেন। এছাড়া ভারতের আসাম ত্রিপুরা ও মণিপুরে ৩৬০,০০০ বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি বাস করে। ব্যবহারিক চর্চার অভাব, আঞ্চলিক বৃহৎ ভাষাসমুহের প্রভাব, রাস্ট্রিয় উদাসীনতা ইত্যাদি নানান কারণে ভাষাটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।

মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর, ২০১২

সাগর সরোয়ার



 নোটিফিকেশন থেকে জানলাম আজ ফেসবুক বন্ধু সাগর সরোয়ারের জন্মদিন। মৃত মানুষকে কিভাবে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে হয় জানিনা। একদিন হয়তো আমিও থাকব না, আমার ওয়ালে এসে বন্ধু শুভাকাঙ্খীরা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে যাবে - ভাবলেই মন বিষাদে ভরে যায়। সাগর সরোয়ারকে চিনতাম না, কখনও দেখিনি। মাঝে মধ্যে আমার পোস্টগুলোতে এসে কমেন্ট রেখে যেতেন, বিশেষ করে আদিবাসী বিষয়ক পোস্ট গুলোতে। মৃত্যুর পরে জেনেছি তিনিই বিখ্যাত সাংবাদিক সাগর সরোয়ার। কতটা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করছি আমরা? মানুষ যদি নিজের বেডরুমের ভিতরেও নিরাপদ থাকে না তাহলে কোথায় নিরাপদ থাকবে মানুষ? আমরা আপনার নিরাপত্তা দিতে পারিনি, সাগর সরোয়ার, পারিনি আপনার হত্যার বিচার করতে। জন্মদিনে আপনার নিকট একটাই প্রার্থনা, আমাদের এই নির্লজ্জতা ও অক্ষমতাকে নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন।

বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ডুকলা সম্প্রদায়


ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে ‌'ডুকলা' শব্দের অর্থ দেখানো হয়েছে অসভ্য,নিকৃষ্ট জাতি বা সম্প্রদায়। সিলেট অঞ্চলে ডুকলা শব্দটি গালি হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। ডুকলা বা শব্দকরেরা সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। তাদের প্রধান পেশা হলো ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো। কুল, ভীল, শবর, মুন্ডাদের মতোই ডুকলারা প্রাচীন ভারতবর্ষের একটি অনার্য জনগোষ্ঠি। ডুকলারা বর্তমানে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত তবে বৃহত্তর হিন্দু সমাজের কাছে তারা অচ্ছ্যুত এবং অস্পৃশ্য। বাঙালি বর্ণহিন্দুরা ডুকলাদের হাতে জল খায় না, নিজেদের চেয়ারে বা বিছানায় ডুকলাদের বসতে দেয় না, বাঙালিদের সাথে তারা বড়জোড় প্লে­ট ছাড়া বিশেষ কাপে চা খেতে পারে। দোকানে বা অন্য কোথাও সবার সাথে বসে কোনো কিছু খাওয়া বারণ। তাদের সাথে একঘরে ঘুমালে, একসাথে উঠলে বসলে, একসাথে খেলে, হাতের রান্না বা জল খেলে অন্যদের জাত চলে যায়!

সমকালীন ইতিহাসে দারিদ্রের যে সীমারেখা চিন্হিত করা হয় ঢুকলারা তার থেকে বহু নীচুস্তরে বাস করে। কেউ গৃহহীন। কারো নিজের শরীরটা বাদে কোন সম্পদ নেই। কেউ ভিক্ষা করে সংসার চালায়। শব্দকর সমাজ আজন্ম দারিদ্রকে নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে। তাদের সন্তানদের চোখেও কোন স্বপ্ন নেই। ছেলেমেয়েগুলো জন্মের পর থেকে নানান দৃশ্য ও অদৃশ্য বাধার সম্মুখীন হয়ে, বৃহৎ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবল হীনমন্যতাবোধ নিয়ে বড় হতে থাকে। তারা অবধারিতভাবেই ধরে নেয় মা-বাবারা যেভাবে নিদারুন দারিদ্র ও হতাশার মধ্যে জীবন কাটায়, তারাও সেভাবে জীবন কাটাবে। তাদের বিশ্বাসে গেঁথে থাকে অদ্ভুত এক সত্য যে, এই দুর্দশার জন্য হয়তো কোন দেবতার অভিশাপ দায়ী, অথবা ঈশ্বর নিজেই চান না তারা ভাল থাকুক।

রাস্ট্রে জনসংখ্যা দমন যখন একটা প্রধান সমস্যা, তখন ডুকলাদের জন্মের চেয়ে মৃত্যুহারই বেশী। তো ডুকলাদের নিয়ে রাস্ট্রের কোন সমস্যা নেই সুতরাং তাদের খবর রাষ্ট্র রাখে না। এভাবে অবহেলা, বঞ্চনা ও সামাজিক বৈষম্যের জাঁতাকলে পড়ে ভূমিপুত্র ডুকলারা হারাতে থাকে নিজেদের অস্তিত্ব, জীবন, জীবিকা, ঢোল, বাদ্য সবকিছু। নিশ্চিহ্ন হতে থাকে মানুষ আর মানুষের জনপদ, মানুষেরই দাপটে!

রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

প্রিন্ট মিডিয়া ও ব্লগ বিষয়ক একটি ক্যাচাল

অতি সম্প্রতি জনৈক তরুন সাহিত্যিকের সাথে ক্যাচালে জড়িয়েছিলাম। ক্যাচালের বিষয় ছিল প্রিন্ট মিডিয়া বনাম ব্লগ।  সেই পুরোনো তর্ক, চর্বিত চর্বন। ব্লগ বা অনলাইন মিডিয়াকে শিল্পসাহিত্যচর্চার মাধ্যম হিসাবে মেনে নিতে তার চরম  আপত্তি। তার অভিযোগগুলো হলো ব্লগ তাৎক্ষণিকতা দোষে আক্রান্ত যা শিল্পের জন্য ভয়ংকর...তারপর আছে  ভাষার ট্রীটমেন্ট ও ভাষার বল্গাহীন ব্যবহার.... মৌলিক সৃষ্টিশীল লেখালেখির সমস্যা... পাঠকের স্বল্পতা,  কম্পিউটারের স্ক্রীনে সাহিত্যপাঠের অনুপযোগিতা ইত্যাদি অজস্র বিষয় ছাপিয়ে যেটি প্রধান হয়ে উঠলো সেটি হলো  মান। তার মতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাধীনমতো একটা কিছু লিখে ব্লগে ছাপিয়ে দিলেই তা লেখা হয়না। কম্পিউটার  স্ক্রীনের সামনে বসে আর যাই হোক বিশুদ্ধ বা মননশীল প্রকৃত রচনা সম্ভব নয়। অনলাইনে লেখা জিনিষ নাকি  সাহিত্যের মধ্যে পড়েনা। নিজের উদাহরন টেনে গর্বের সাথে বর্ণনা দিলেন গাদা গাদা লেখা পত্রিকায় পাঠিয়ে ছাপা না  হওয়ার কথা... একটা লেখা ছাপার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করার কথা... চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা... তারপর  একদিন সম্পাদক মহোদয়ের অশেষ কৃপায় লেখাটি ছাপার অক্ষরে বের হলে সেটাই হলো তার সাফল্য বা স্বীকৃতি।

 আহা বেচারা কাগুজে সাহিত্যিক! এরা পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখলেই মনে করে জাতে উঠা হলো।  ব্লগের শক্তি সম্বন্ধে এদের কোন ধারনা নেই। বিশ্বজুড়ে ব্লগারদের ঠেকাতে ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল’ তৈরি হচ্ছে,  ব্লগারদের  নামে মৃত্যুপরোয়ানা ঝুলছে , ব্লগের অসাধারণ শক্তি আর সম্ভাবনার কারণেই সেটা হয়েছে। আর আমাদের কাগুজে  সাহিত্যিকরা সম্পাদকদের ব্রাহ্মন জ্ঞান করেন। এরা গতানুগতিক মিডিয়ার ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে না পেরে  পৈতা পরা সম্পাদকের ক্রীতদাস হয়ে থাকাকেই সাফল্য বলে মনে করে। এরা কখনো প্রশ্ন করে না একটি লেখাকে যে  সম্পাদক অযোগ্য বলে বাতিল করছে তারই বা যোগ্যতা কি। নইলে বুঝতে পারতো স্বাধীন, সাহসী মুক্তচিন্তার  প্রতিফলন, নিমর্ম সত্যকে সাহসিক মানসিকতায় উপস্থাপনের চর্চা কেবল ব্লগ বা মুক্তমিডিয়ায় সম্ভব।

 ব্লগার ও লেখক আব্দুর রাজ্জাক শিপন ভাই একটা লেখায় বলেছিলেন, প্রিন্ট মিডিয়ার আট টাকার বড় বড় পাতাগুলোতে লেখে ভরিয়ে ফেলেন যেসব লেখকরা, বা অসফল সাহিত্যিক এবং তথাকথিত সফল সাহিত্য সম্পাদকের সাহিত্যপাতায় নিত্য সাহিত্যের ছা'পোনা প্রসব করেন যেসব বিদগ্ধ লেখক-কবি, তাদের নাকখানি বিভৎসরকম উঁচু । উঁচু নাকের জন্য অনেক দৃশ্যমান বস্তুও তাদের অদেখা থেকে যায় । ফলে, ওয়েবলগের লেখকদের তারা দেখেন না বলে নাকচ করে দিতে চান । আদতে, সাহিত্যের ছা-পোনা প্রসব করা সেইসব ফরমায়েশী লেখকদের চে' দশগুণ ভালো লেখেন এরকম অন্তত শ'খানেক ব্লগার বিভিন্ন ব্লগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন । সাহিত্য পাতার লেখকরা আবার লেখালেখির পাশাপাশি বিশেষ গুণের অধিকারী হওয়া বাঞ্চনীয় । সাহিত্য পাতার বিভাগীর সম্পাদকের অনুরক্ত দলে নাম লেখাতে হবে । কিঞ্চিত তৈলচর্চার অভ্যেস রপ্ত করতে হবে । বাংলাদেশের সব ক'টি দৈনিকের এরকম অনুরক্ত দল রয়েছে । পত্রিকাওয়ালারা যে পাঠক ফোরাম, পাঠক সংগ তৈরি করছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেসব সংগঠন ছড়িয়ে দিচ্ছে, তা নিজেদের অনুরক্ত একটি ভক্তদল গড়ে তোলার ব্যবসায়ী বু্দ্ধি ছাড়া কিছুই না। ওয়েবলগের লোকজন আবার এসব পোছেনা । ব্লগ নামের বিকল্প মিডিয়াতে তারা লিখে যাচ্ছেন কোনরকম কাঁছি-ছুড়ির কাটাছেঁড়া ছাড়াই । বিশেষ কোন গোষ্ঠিকে খুশী করবার ব্যাপার মাথায় রাখতে হয়না ব্লগারদের । বিকল্প মিডিয়ার এই উত্থান স্বভাবতই প্রিন্ট মিডিয়ার উঁচু নাকের লোকদের আঁতে ঘা দিচ্ছে । ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে তারা তাই, ওয়েবলগের লেখকদের স্বীকৃতি দিতে গাঁই-গুই করেন ।

আমারও প্রায়ই যে কথাটা মনে হয় সেটা হলো প্রিন্ট মিডিয়ার সাহিত্যিকেরা অনলাইনে যারা লেখালেখি করেন তাদের  বিষয়ে একধরনের হীনমন্যতায় ভূগেন অথবা তাদেরকে হুমকি হিসেবে দেখেন। এজন্যই দেখা যায় স্কুলের বার্ষিকীতে  একটি গরুরচনা লিখে কিংবা আলুপেপার বা কালুকন্ঠের সাহিত্যপাতায় সস্তা দুলাইন লিখে কেউ কেউ সাহিত্যিক হয়ে  যান, অন্যদিকে ব্লগে রাতের পর রাত পরিশ্রম করে লিখে মাস্টারমশাইদের লাল চোখ উপেক্ষা করে দুনিয়াব্যাপী  চিন্তার ঢেউ ছড়িয়ে দেয়া ব্লগারটি হয়ে যান অছ্যুত।

তবে এই হীনমন্যতা অমুলক নয়। দীর্ঘ সময় ধরে তারা একটা জায়গা পাকাপোক্ত করেছেন, সেইটা ব্লগাররা এসে নাড়িয়ে দেবে এটা মানা তাদের জন্য কষ্টকর তাও বুঝতে পারছি। তবে পরিবর্তন যা আসার তা আসবে অনিবার্যভাবেই। কেউ স্বীকার করুক আর না করুক।

শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

মণিপুরি গহনা


মণিপুরি গহনা। ক্রমানুসারে (উপর থেকে নীচে):
১. খৌনা নাকপি
২. তেলকা নাকপি
৩. লিকসৈ
৪. থাবাক
৫. কাঠিসুরি (হেইকুরু লিকসৈ)

শুক্রবার, ২৪ আগস্ট, ২০১২

চা শ্রমিক


যুগ যুগ ধরে অবহেলা আর লাঞ্চনার বোঝা মাথায় নিয়ে অবিশ্বাস্য জীবন যাপন করছে চা শ্রমিক জনগোষ্ঠি। ভোর না হতেই যে মানুষগুলো মাথায় ঝাঁকা নিয়ে দলবেঁধে চা বাগানে ছুটে যায়, সারাদিন পরিশ্রম করে খুপড়িতে ফেরার আগে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় মাত্র ৪৮ টাকা। মাসিক আয় সাকুল্যে ৪৮X ৩০= ১৪৪০ টাকা। এই আয় দিয়ে চা-বাগানের খুপড়ির মধ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে সংসার চালাতে হয় এক জন চা শ্রমিককে। সৈয়দ মুজতবা আলীর গল্পে পন্ডিত পরিবারটি লাট সাহেবের তিন ঠ্যাংঅলা কুত্তার এক ঠ্যাঙের সমান ছিল। আর আমাদের চা শ্রমিকেরা এই কয়েক যুগে ঐ কুত্তাটির একটি লোমেরও সমান হয়ে উঠতে পারেনি!

শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১২

ওড়না পেজ

জলপাইগুড়ি জেলায় সাহেবগঞ্জ শহরের নিকট বাবার মাজারে কলিযুগে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল। ঐ মাজারে খাদেম নামের এক লোক দেখল হঠাৎ লেংটা মা-কালী বের হলেন। উনাকে দেখে খাদেম খুব ভয় পেয়ে গেলেন। তখন মা-কালী বুকে ওড়না দিতে দিতে বললেন,ভয় পেও না,আমি যা বলছি মন দিয়ে শুন। কলিযুগে পাপ বেড়ে গেছে,এই পাপিদের ধ্বংস করার জন্য আমি পৃথিবীতে জন্ম নেব। যে আমার নামে ফেসবুকে একশটা ওড়না পেজ বানিয়ে প্রচার করবে তাহার মনের ইচ্ছা ২৪ দিনের মধ্য পূরন করবো। যে আজ কাল করে ২৪দিন কাটিয়ে দিবে তাহার খুব লোকসান হবে। এই কথা বলে কালী মা চলে গেলেন। এই কথা বিশ্বাস করে মমিন নামের এক লোক ১০০টা ওড়না পেজ খুলে লাইক ভিক্ষা করতে থাকলো। ২৪ ঘন্টার মধ্যে সে নগদ ৫১ লক্ষ টাকা পেয়ে গেল। আরেক ওড়না পেজের এডমিন ২৮৫টি ফেক একাউন্ট খুলে ঐ পেইজে লাইক মারায় ৮দিন পরে, মাটি খুড়ে সে একটি সোনার কলসী পেয়ে কোটিপতি হয়ে গেছে। একজন গরিব ছাত্র ফেসবুকে একটি ওড়না পেজ খুলবে বলে গুগল থেকে দক্ষিনি নায়িকাদের ছবি ডাউনলোড করতেই,তার চাকরি হয়ে গেল। একজন লোক মিথ্যা মনে করে ঐ পেইজটি ব্লক করে রাখে,পরে তার অনেক ক্ষতি হয় এবং তার চাচা মারা যায়। আরেকজন ঐ পেইজে অনেক ওড়না ছাড়া তরুণীদের লেংটা ছবি দেখতে থাকে অথচ লাইক করে না, এভাবে এক মাস অবধি বিলম্ব করায় তার হোগা উধাও হয়ে যায় এবং তার বউ মারা যায়। ধানতলা গ্রামে ৫ জন মিলে ১৫০টি ওড়না পেজ খুলায় এক ঘন্টার মধ্য ১৫ লক্ষ লটারিতে পেল। এখন তারা একটি মাজার করবে ভাবছে। সকলের কাছে আমার বিনীত নিবেদন এই যে,অবহেলা করবেন না, প্রচার করলে অবশ্যই ফল পাবেন।

বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১২

বিজ্ঞানপত্রিকা

আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে বাংলা ভাষায় ছোটদের বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য জগদীশচন্দ্র বসু লিখেছিলেন 'অব্যক্ত' । লিখেই প্রথমে দেখান রবীন্দ্রনাথকে। তো বইটি পড়ে রবিবাবু বললেন, তোমার লেখা পড়ে মনে হয় সাহিত্য করলে তুমি বোধহয় ভাল করতে। ঐটা ছিল রবীন্দ্রনাথের উপদেশ। এ থেকে বোঝা যায় উপনিবেশিক আমল থেকে আমাদের মনন জগতের রূপান্তরটা কিভাবে ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের আদর্শ হয়ে উঠলেন; পদ্য লেখা, গানটান গাওয়া এগুলিও আমাদের আদর্শ হয়ে উঠল। আমাদের তরুনদের মধ্যেও বিজ্ঞানী হওয়ার চাইতে বরং অন্যকিছুর দিকেই বেশী আগ্রহ তৈরী হল, যারা বিজ্ঞানের সাথে জড়িত তারাও ছদ্মবিজ্ঞানের টাচ দেয়া রূপকথা বা কল্পকাহিনীর লেখার দিকে ঝুকে পড়ল। আমরা একজন গায়ক, অভিনেতা, টিভি সিরিয়াল লেখক বা চটুল ব্লগ লেখককে যেরকম মুল্যায়ন করি, কিন্তু একজন বিজ্ঞান লেখককে তা করি না বরং আতেঁল বলে ট্যাগিং দেই বা ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখি। যে কাজটা সমাজের জন্য দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কোন না কোন কারণে তার কদর ও স্বীকৃতি কমে গেছে। অথচ পঞ্চাশ বা একশ বছর আগে বিজ্ঞানের উপর কত ভাল ভাল কাজ হয়েছে। প্রতিদিন আমাদের নোংরা শহরগুলো থেকে অসংখ্য ঝকঝকে সুন্দর মনোহর রুচিশীল সাহিত্যপত্রিকা বা সিনেম্যাগাজিন বের হয়, অথচ একটা মানসম্পন্ন বিজ্ঞানপত্রিকা বের হয় না!

শুক্রবার, ৬ জুলাই, ২০১২

শফিক রেহমান

ট্রেনে যেতে যেতে শফিক রেহমানের 'মৌচাকে ঢিল' পড়ছি। লোকটার জন্যে করুনা হচ্ছে। এখন সব লেখা মনে হয় নিজেই লেখে। বাংলা সিনেমার গল্প দিয়ে পত্রিকা ভরিয়ে ফেলেছে। গল্পের নামগুলোও সেরকম- চরিত্রবান প্রতারক, ভুল বুঝা, ঠকবাজের কন্যা, সত্য গোপন, প্রতারক নং ১... আর বরাবরের মতো ভুঁয়া নামে তার নিজের রচিত যৌন নীপিড়নের শিকার নারীদের ফ্যান্টাসি পর্ণ স্টোরি তো আছেই। ভিকটিমের মুখে এরকম রগরগে যৌনতার বিবরন কেবল শফিক রেহমানের পক্ষেই সম্ভব। এ ধরনের লেখাগুলো সাধারনত শেষ হয় এভাবে - 

" সংসারের দিকে তাকিয়ে আজো আমি নরপশুটির কুকর্ম সহ্য করে যাচ্ছি..."

:) 

শুক্রবার, ১৬ মার্চ, ২০১২

সুদেষ্ণা

আজ ১৬ই মার্চ ভাষাশহীদ সুদেষ্ণা দিবস। বাঙালি বাদে ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে আরেকটি জাতি - বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি। বাঙালিদের মতোই বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদেরকে তাদের মাতৃভাষার স্বীকৃতির জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। সেই সংগ্রামে অনেক রক্ত ও প্রাণ ঝরেছে এবং সে সংগ্রাম ছিল বাংলা ভাষা আন্দোলনের চেয়েও দীর্ঘতর। মাতৃভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবীতে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে সংঘটিত হয়েছে এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলন। সেই আন্দোলনের চরম পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের এই দিনে পুলিশের গুলিতে আত্মাহুতি দিয়েছিল সুদেষ্ণা সিংহ নামের এই বিদ্রোহী তরুণী।

পৃথিবীর সমস্ত অবহেলিত, নিপীড়িত ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তাদের পক্ষ থেকে আজ শহীদ সুদেষ্ণার জন্য শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। আজকের দিনে পৃথিবীর সকল রাস্ট্রকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠিগুলোর ভাষা ও জাতিগত অস্তিত্বের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সমমর্যাদা দেবার জন্য আবারো দাবী জানাচ্ছি।

শহীদ সুদেষ্ণা ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদের ভাষা আন্দোলন নিয়ে বিস্তারিত লেখাটি পড়ুন এই লিংকে - 


http://www.somewhereinblog.net/blog/kungothangblog/29345175