বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ডুকলা সম্প্রদায়


ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে ‌'ডুকলা' শব্দের অর্থ দেখানো হয়েছে অসভ্য,নিকৃষ্ট জাতি বা সম্প্রদায়। সিলেট অঞ্চলে ডুকলা শব্দটি গালি হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। ডুকলা বা শব্দকরেরা সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। তাদের প্রধান পেশা হলো ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো। কুল, ভীল, শবর, মুন্ডাদের মতোই ডুকলারা প্রাচীন ভারতবর্ষের একটি অনার্য জনগোষ্ঠি। ডুকলারা বর্তমানে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত তবে বৃহত্তর হিন্দু সমাজের কাছে তারা অচ্ছ্যুত এবং অস্পৃশ্য। বাঙালি বর্ণহিন্দুরা ডুকলাদের হাতে জল খায় না, নিজেদের চেয়ারে বা বিছানায় ডুকলাদের বসতে দেয় না, বাঙালিদের সাথে তারা বড়জোড় প্লে­ট ছাড়া বিশেষ কাপে চা খেতে পারে। দোকানে বা অন্য কোথাও সবার সাথে বসে কোনো কিছু খাওয়া বারণ। তাদের সাথে একঘরে ঘুমালে, একসাথে উঠলে বসলে, একসাথে খেলে, হাতের রান্না বা জল খেলে অন্যদের জাত চলে যায়!

সমকালীন ইতিহাসে দারিদ্রের যে সীমারেখা চিন্হিত করা হয় ঢুকলারা তার থেকে বহু নীচুস্তরে বাস করে। কেউ গৃহহীন। কারো নিজের শরীরটা বাদে কোন সম্পদ নেই। কেউ ভিক্ষা করে সংসার চালায়। শব্দকর সমাজ আজন্ম দারিদ্রকে নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে। তাদের সন্তানদের চোখেও কোন স্বপ্ন নেই। ছেলেমেয়েগুলো জন্মের পর থেকে নানান দৃশ্য ও অদৃশ্য বাধার সম্মুখীন হয়ে, বৃহৎ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবল হীনমন্যতাবোধ নিয়ে বড় হতে থাকে। তারা অবধারিতভাবেই ধরে নেয় মা-বাবারা যেভাবে নিদারুন দারিদ্র ও হতাশার মধ্যে জীবন কাটায়, তারাও সেভাবে জীবন কাটাবে। তাদের বিশ্বাসে গেঁথে থাকে অদ্ভুত এক সত্য যে, এই দুর্দশার জন্য হয়তো কোন দেবতার অভিশাপ দায়ী, অথবা ঈশ্বর নিজেই চান না তারা ভাল থাকুক।

রাস্ট্রে জনসংখ্যা দমন যখন একটা প্রধান সমস্যা, তখন ডুকলাদের জন্মের চেয়ে মৃত্যুহারই বেশী। তো ডুকলাদের নিয়ে রাস্ট্রের কোন সমস্যা নেই সুতরাং তাদের খবর রাষ্ট্র রাখে না। এভাবে অবহেলা, বঞ্চনা ও সামাজিক বৈষম্যের জাঁতাকলে পড়ে ভূমিপুত্র ডুকলারা হারাতে থাকে নিজেদের অস্তিত্ব, জীবন, জীবিকা, ঢোল, বাদ্য সবকিছু। নিশ্চিহ্ন হতে থাকে মানুষ আর মানুষের জনপদ, মানুষেরই দাপটে!

রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

প্রিন্ট মিডিয়া ও ব্লগ বিষয়ক একটি ক্যাচাল

অতি সম্প্রতি জনৈক তরুন সাহিত্যিকের সাথে ক্যাচালে জড়িয়েছিলাম। ক্যাচালের বিষয় ছিল প্রিন্ট মিডিয়া বনাম ব্লগ।  সেই পুরোনো তর্ক, চর্বিত চর্বন। ব্লগ বা অনলাইন মিডিয়াকে শিল্পসাহিত্যচর্চার মাধ্যম হিসাবে মেনে নিতে তার চরম  আপত্তি। তার অভিযোগগুলো হলো ব্লগ তাৎক্ষণিকতা দোষে আক্রান্ত যা শিল্পের জন্য ভয়ংকর...তারপর আছে  ভাষার ট্রীটমেন্ট ও ভাষার বল্গাহীন ব্যবহার.... মৌলিক সৃষ্টিশীল লেখালেখির সমস্যা... পাঠকের স্বল্পতা,  কম্পিউটারের স্ক্রীনে সাহিত্যপাঠের অনুপযোগিতা ইত্যাদি অজস্র বিষয় ছাপিয়ে যেটি প্রধান হয়ে উঠলো সেটি হলো  মান। তার মতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাধীনমতো একটা কিছু লিখে ব্লগে ছাপিয়ে দিলেই তা লেখা হয়না। কম্পিউটার  স্ক্রীনের সামনে বসে আর যাই হোক বিশুদ্ধ বা মননশীল প্রকৃত রচনা সম্ভব নয়। অনলাইনে লেখা জিনিষ নাকি  সাহিত্যের মধ্যে পড়েনা। নিজের উদাহরন টেনে গর্বের সাথে বর্ণনা দিলেন গাদা গাদা লেখা পত্রিকায় পাঠিয়ে ছাপা না  হওয়ার কথা... একটা লেখা ছাপার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করার কথা... চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা... তারপর  একদিন সম্পাদক মহোদয়ের অশেষ কৃপায় লেখাটি ছাপার অক্ষরে বের হলে সেটাই হলো তার সাফল্য বা স্বীকৃতি।

 আহা বেচারা কাগুজে সাহিত্যিক! এরা পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখলেই মনে করে জাতে উঠা হলো।  ব্লগের শক্তি সম্বন্ধে এদের কোন ধারনা নেই। বিশ্বজুড়ে ব্লগারদের ঠেকাতে ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল’ তৈরি হচ্ছে,  ব্লগারদের  নামে মৃত্যুপরোয়ানা ঝুলছে , ব্লগের অসাধারণ শক্তি আর সম্ভাবনার কারণেই সেটা হয়েছে। আর আমাদের কাগুজে  সাহিত্যিকরা সম্পাদকদের ব্রাহ্মন জ্ঞান করেন। এরা গতানুগতিক মিডিয়ার ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে না পেরে  পৈতা পরা সম্পাদকের ক্রীতদাস হয়ে থাকাকেই সাফল্য বলে মনে করে। এরা কখনো প্রশ্ন করে না একটি লেখাকে যে  সম্পাদক অযোগ্য বলে বাতিল করছে তারই বা যোগ্যতা কি। নইলে বুঝতে পারতো স্বাধীন, সাহসী মুক্তচিন্তার  প্রতিফলন, নিমর্ম সত্যকে সাহসিক মানসিকতায় উপস্থাপনের চর্চা কেবল ব্লগ বা মুক্তমিডিয়ায় সম্ভব।

 ব্লগার ও লেখক আব্দুর রাজ্জাক শিপন ভাই একটা লেখায় বলেছিলেন, প্রিন্ট মিডিয়ার আট টাকার বড় বড় পাতাগুলোতে লেখে ভরিয়ে ফেলেন যেসব লেখকরা, বা অসফল সাহিত্যিক এবং তথাকথিত সফল সাহিত্য সম্পাদকের সাহিত্যপাতায় নিত্য সাহিত্যের ছা'পোনা প্রসব করেন যেসব বিদগ্ধ লেখক-কবি, তাদের নাকখানি বিভৎসরকম উঁচু । উঁচু নাকের জন্য অনেক দৃশ্যমান বস্তুও তাদের অদেখা থেকে যায় । ফলে, ওয়েবলগের লেখকদের তারা দেখেন না বলে নাকচ করে দিতে চান । আদতে, সাহিত্যের ছা-পোনা প্রসব করা সেইসব ফরমায়েশী লেখকদের চে' দশগুণ ভালো লেখেন এরকম অন্তত শ'খানেক ব্লগার বিভিন্ন ব্লগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন । সাহিত্য পাতার লেখকরা আবার লেখালেখির পাশাপাশি বিশেষ গুণের অধিকারী হওয়া বাঞ্চনীয় । সাহিত্য পাতার বিভাগীর সম্পাদকের অনুরক্ত দলে নাম লেখাতে হবে । কিঞ্চিত তৈলচর্চার অভ্যেস রপ্ত করতে হবে । বাংলাদেশের সব ক'টি দৈনিকের এরকম অনুরক্ত দল রয়েছে । পত্রিকাওয়ালারা যে পাঠক ফোরাম, পাঠক সংগ তৈরি করছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেসব সংগঠন ছড়িয়ে দিচ্ছে, তা নিজেদের অনুরক্ত একটি ভক্তদল গড়ে তোলার ব্যবসায়ী বু্দ্ধি ছাড়া কিছুই না। ওয়েবলগের লোকজন আবার এসব পোছেনা । ব্লগ নামের বিকল্প মিডিয়াতে তারা লিখে যাচ্ছেন কোনরকম কাঁছি-ছুড়ির কাটাছেঁড়া ছাড়াই । বিশেষ কোন গোষ্ঠিকে খুশী করবার ব্যাপার মাথায় রাখতে হয়না ব্লগারদের । বিকল্প মিডিয়ার এই উত্থান স্বভাবতই প্রিন্ট মিডিয়ার উঁচু নাকের লোকদের আঁতে ঘা দিচ্ছে । ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে তারা তাই, ওয়েবলগের লেখকদের স্বীকৃতি দিতে গাঁই-গুই করেন ।

আমারও প্রায়ই যে কথাটা মনে হয় সেটা হলো প্রিন্ট মিডিয়ার সাহিত্যিকেরা অনলাইনে যারা লেখালেখি করেন তাদের  বিষয়ে একধরনের হীনমন্যতায় ভূগেন অথবা তাদেরকে হুমকি হিসেবে দেখেন। এজন্যই দেখা যায় স্কুলের বার্ষিকীতে  একটি গরুরচনা লিখে কিংবা আলুপেপার বা কালুকন্ঠের সাহিত্যপাতায় সস্তা দুলাইন লিখে কেউ কেউ সাহিত্যিক হয়ে  যান, অন্যদিকে ব্লগে রাতের পর রাত পরিশ্রম করে লিখে মাস্টারমশাইদের লাল চোখ উপেক্ষা করে দুনিয়াব্যাপী  চিন্তার ঢেউ ছড়িয়ে দেয়া ব্লগারটি হয়ে যান অছ্যুত।

তবে এই হীনমন্যতা অমুলক নয়। দীর্ঘ সময় ধরে তারা একটা জায়গা পাকাপোক্ত করেছেন, সেইটা ব্লগাররা এসে নাড়িয়ে দেবে এটা মানা তাদের জন্য কষ্টকর তাও বুঝতে পারছি। তবে পরিবর্তন যা আসার তা আসবে অনিবার্যভাবেই। কেউ স্বীকার করুক আর না করুক।

শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

মণিপুরি গহনা


মণিপুরি গহনা। ক্রমানুসারে (উপর থেকে নীচে):
১. খৌনা নাকপি
২. তেলকা নাকপি
৩. লিকসৈ
৪. থাবাক
৫. কাঠিসুরি (হেইকুরু লিকসৈ)