শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১১

আজ গোকুলানন্দ গীতিস্বামীর জন্মদিন



আজ ২৬ নভেম্বর বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সাহিত্যের পথিকৃৎ গোকুলানন্দ গীতিস্বামীর (১৮৯৬ -১৯৬২) জন্মদিন। গোকুলানন্দ মুলত ছিলেন একজন চারণকবি। তৎকালীন মণিপুরী সমাজের শিক্ষিত একটি বৃহদাংশ যখন সাহেবি এবং বাঙালি চালচলন রপ্ত করতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় মাতৃভাষায় নানান কবিতা, গান, গীতিপালা লিখে সেগুলোর পরিবেশনা নিয়ে ঘুরতেন গ্রাম থেকে গ্রামে। নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি শিল্প সবকিছু বিস্মৃত হয়ে এই সমাজ যখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হবার দ্বারপ্রান্তে, তখন গীতিস্বামী সক্রেটিসের মতো নতুন আশার, নতুন সম্ভাবনার বাণী ঘরে ঘরে ফেরী করে বেড়িয়েছেন ক্লান্তিহীনভাবে। তিনি দেখিয়েছেন,এই ভাষা এই সংষ্কৃতির ভেতরেও বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। শুধুমাত্র লোকমুখে প্রচারিত এই দরিদ্র ভাষাটি দিয়েও রচিত হতে পারে উৎকৃষ্ট সাহিত্য, শিল্পরস। তিনিই সর্বপ্রথম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ভেতর জাতীয়তাবোধ ও মাতৃভাষার প্রতি চেতনা জাগ্রত করেন।

গান গেয়ে সমাজকে জাগানোর দ্বায়িত্বে স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নেন, পাশাপাশি চলে নাট্যপালা মঞ্চায়ন। সমাজ রাজনীতি বিষয়ে গোকুলানন্দের জ্ঞান ও মতাদর্শ ছিল স্বচ্ছ ও শক্তিশালী। গোঁড়ামি ও পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে তার অবস্থান গানে গানে স্পষ্ট করেন। এজন্যে কম লাঞ্ছনা গঞ্জনা সইতে হয়নি গোকুলানন্দকে। সমাজের উচ্চশ্রেণীর ব্যক্তিরা যারা তাকে একসময় 'পাগল', 'কাক' ইত্যাদি বিশেষনে অভিহীত করেছে, তারাই একসময় তাকে "গীতিস্বামী" নামক সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত করতে বাধ্য হয়েছে।

গোকুলানন্দের জন্ম বর্তমান মৌলবীবাজার জেলার কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নের জবলারপার নামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে, ১৮৯৬ সালের ২৬ নভেম্বর তারিখে। বাংলাদেশ ভারত দুদেশেই মণিপুরী সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয় এই সমাজবিপ্লবী গীতিকবি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সমাজ নিয়ে অসংখ্য সমাজ-সংস্কারমুলক গান, কবিতা এবং নাটকের পাশাপাশি নীতিশাস্ত্র বা চরিত্র গঠনমুলক নানান বাণী রেখে গিয়েছেন। একটি অনগ্রসর কৌম সমাজের জন্য তাঁর এসব আধুনিক বাণী কাজ করেছে শানিত অস্ত্রের মতো।

শুভ জন্মদিন গোকুলানন্দ!

শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১১

একটি ভালবাসার গল্প ১


Photo: একটি ভালবাসার গল্প: 

মোবাইল আবিস্কারের পূর্বে, এবং তা আলুব্যাপারি থেকে পানবিড়িওয়ালা হয়ে যে কোন বয়সীর হাতে এসে যাওয়ার পূর্বে এক ধরনের পৃথিবী ছিল। তখন পাকা রাস্তা একটু কম ছিল। গাছপালা ছিল বেশি। সেই প্রাচীন সময়ের কোন বিকেলের দিকে ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির প্রথম দেখা। দেখা বলতে হলুদ ইনাফি আর সবুজ ফানেকে আবৃত নারী অবয়ব। তখন চুলের একটিমাত্র রং ছিল; কালো। রাস-উৎসবের দিন। কার্ত্তিকের সে বিকেলে আকাশ ছিল নীল। চারদিকে ঢোল করতালের আওয়াজ। তখন আমাদের রাস-উৎসব রবি বা অন্যকোন কর্পোরেটের কাছে বিক্রি হয়নি। 

মেয়েটি আরো কয়েকজনের সঙ্গে খুব ধীরগতিতে রাসমেলার মাঠ থেকে পাথর বিছানো রাস্তা দিয়ে নীচু লজ্জাবতীর ঝোপ আর বাচ্চা শাল গাছের জঙ্গলের পাশ দিয়ে নির্বিঘ্নে হেঁটে যাচ্ছিল। ছেলেটি মেয়েটিকে আর একটু দেখতে পাওয়ার আশায় কয়েক পা এগিয়ে গিয়েছিল বা এগিয়ে যাবে কিনা ভাবছিল। মেয়েটি ছেলেটিকে দেখেনি। অথবা দেখে থাকলেও মেয়েদের মুখ দেখে সেই প্রাচীন কালে কিছুই টের পাওয়া যেত না।

   

    
    

তারপরের কাহিনী না জানলেও চলতে পারে, কেননা এতে শেষ পর্যন্ত ছেলেটি মেয়েটিকে কিছুই বলতে পারেনি!

ইনাফি, ফানেক: মণিপুরি নারীদের পরিধেয় বস্ত্র
ছবি: বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি চিত্রশিল্পী শক্তিকুমার সিংহের পেইন্টিং 

মোবাইল আবিস্কারের পূর্বে, এবং তা আলুব্যাপারি থেকে পানবিড়িওয়ালা হয়ে যে কোন বয়সীর হাতে এসে যাওয়ার পূর্বে এক ধরনের পৃথিবী ছিল। তখন পাকা রাস্তা একটু কম ছিল। গাছপালা ছিল বেশি। সেই প্রাচীন সময়ের কোন বিকেলের দিকে ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির প্রথম দেখা। দেখা বলতে হলুদ ইনাফি আর সবুজ ফানেকে আবৃত নারী অবয়ব। তখন চুলের একটিমাত্র রং ছিল; কালো। রাস-উৎসবের দিন। কার্ত্তিকের সে বিকেলে আকাশ ছিল নীল। চারদিকে ঢোল করতালের আওয়াজ। তখন আমাদের রাস-উৎসব রবি বা অন্যকোন কর্পোরেটের কাছে বিক্রি হয়নি।

মেয়েটি আরো কয়েকজনের সঙ্গে খুব ধীরগতিতে রাসমেলার মাঠ থেকে পাথর বিছানো রাস্তা দিয়ে নীচু লজ্জাবতীর ঝোপ আর বাচ্চা শাল গাছের জঙ্গলের পাশ দিয়ে নির্বিঘ্নে হেঁটে যাচ্ছিল। ছেলেটি মেয়েটিকে আর একটু দেখতে পাওয়ার আশায় কয়েক পা এগিয়ে গিয়েছিল বা এগিয়ে যাবে কিনা ভাবছিল। মেয়েটি ছেলেটিকে দেখেনি। অথবা দেখে থাকলেও মেয়েদের মুখ দেখে সেই প্রাচীন কালে কিছুই টের পাওয়া যেত না।






তারপরের কাহিনী না জানলেও চলতে পারে, কেননা এতে শেষ পর্যন্ত ছেলেটি মেয়েটিকে কিছুই বলতে পারেনি!





_________________________________________________________
ইনাফি, ফানেক: মণিপুরি নারীদের পরিধেয় বস্ত্র
ছবি: বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি চিত্রশিল্পী শক্তিকুমার সিংহের পেইন্টিং

রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১

জাতিসংঘে একজন আদিবাসী আছেন এটা কম কথা নয় : জাতিসংঘ মহাসচিব

বৈঠকে বাংলাদেশে আদিবাসী নিয়ে প্রশ্ন তুলেন মহাসচিব। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরাই দেশের সব চেয়ে বড় আদিবাসী। অন্য যারা উপজাতি হিসেবে আছে তারা আমাদের পূর্বপুরুষদের অনেক পরে বাংলাদেশে এসেছে। এ হিসেবে আদিবাসী বললে আমরাই আসল আদিবাসী।

সেক্রেটারি জেনারেল এসময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে কৌতুকের সুরে বলেন, তাহলে তো আপনার স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোমেন একজন আদিবাসী। জাতিসংঘে একজন আদিবাসী আছেন এটা কম কথা নয়। 



http://www.amadershomoy1.com/content/2011/09/25/news0708.htm
 

রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১১

উপজাতি বা আদিবাসী ক্যাটাগরিগরন বিষয়ে



Photo: Mro, Bandarban.
© Kabirul Islam

উপজাতি বা আদিবাসী এইরকম ক্যাটাগরিকরনের ধারনার সাথে ব্যাক্তিগতভাবে আমি একমত নই। এরকম ক্যটাগরিকরনে অনেকেরই জাতিগত পরিচয় বিলীন হয়ে যায় কারণ প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব জাতিগত পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। শ্রেনীকরনের সাথে শোষনের একটা যোগসূত্র আছে; দুর্বলদের একটা ক্যাটাগরিতে নিয়ে ফেলতে পারলে শোষনপ্রক্রিয়া সহজ হয়। বাঙালি আগে ছিল একাই একশো, মানে জাতি; আর বাকি যারা তারা ছিল সব উপজাতি। এখন সময় সুযোগ বুঝে তারা হতে যাচ্ছে আদিবাসী, আর বাকীরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি। কিন্তু এখানে বাঙালির সাংষ্কৃতিক বা ভাষিক পরিচয়টা আর থাকলো না, হয়ে গেল পুরোপুরি স্থানকেন্দ্রিক। মনস্তত্বটি এমন - এই্ স্থানে আমরা আগে এসেছি ,আমরা সংখ্যাগুরু, তাই্ এখানকার সবকিছুই আমাদের, এবং সবকিছু আমাদের কথামতোই চলবে।

রাস্ট্র নিজে কখনই নন-মেইনস্ট্রীমদের স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের অধিকার ফধিকারের দিকে নজরও দেয়নি। এখন যখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঝুকিগ্রস্থ দুর্বল জনগোষ্ঠিদের বিষয়ে কিছুটা সচেতনতা তৈরী হচ্ছে, তখন রাস্ট্র তা সহ্য করতেই পারছেনা, বরং বাধা দিচ্ছে। উপরন্তু এ থেকে বাড়তি সুবিধা ও ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে নিজেই আদিবাসী সাজার চেষ্টায় আছে।

বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০১১

সিলেটিরাই সর্বপ্রথম বাংলাকে মাতৃভাষা করার দাবী তোলে

বৃটিশ ভারতে সিলেটিরাই সর্বপ্রথম বাংলাকে মাতৃভাষা হিসাবে মর্যাদা দেয়ার দাবী জানায়। ১৯২৭ সালে আসাম প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার রণকেলী গ্রামের আবদুর হামিদ চৌধুরী (সোনা মিয়া) একটি মামলার আসামী দারোগার শাস্তি সম্পর্কে জানতে চেয়ে বাংলা ভাষায় প্রশ্ন করেন। মামলাটি ছিল ১৯২২ সালে গোলাপগঞ্জ থানার মাইঝভাগ গ্রামে মগফুর আলীর বাড়িতে সংঘটিত ছিন্ন কোরাণ সম্পর্কিত। জনাব সোনা মিয়ার প্রশ্নের জবাবে পরিষদের জুডিশিয়াল মেম্বার বলেন, বাংলা ভাষায় প্রশ্ন করলে এর উত্তর দেয়ার বিধান আইনে নাই। তখন সিলেটের সব সদস্য রুখে দাঁড়ান। তারা দাবী জানান মাতৃভাষায় কথা বলা মানুষের জন্মগত অধিকার। সিলেট বিভাগ সেসময় আসাম প্রাদেশিক পরিষদের অংশ ছিল। একই বছর (১৯২৭ সালে) সরকার বাংলা ভাষাকে আসাম প্রাদেশিক পরিষদের ভাষা হিসেবে যুক্ত করেন ।


তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া(২০০৬), সিলেট বিভাগ পরিচিতি (২০০১), মণিপুরি থিয়েটারের পত্রিকা (২০০৭)

সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১১

সংবিধান ও আদিবাসি

১.
সংবিধানের নাগরিকত্ব অনুচ্ছেদ ৬-এর (২) সংশোধিত আওয়ামী ভার্সনে বলা হয়েছে - “বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশি বলিয়া পরিচিত হইবেন"। মহান রাস্ট্রের মহান শাসক ও অধিকর্তা জনরা কি একটু বুঝিয়ে দেবেন আমি কুঙ্গ থাঙ কিভাবে বাঙালি জাতিভুক্ত হলাম? নাকি 'বাংলাদেশের জনগন' পরিচিতির মধ্যে আমাকে গননাই করা হয়না?


২. 
রাস্ট্রযন্ত্রের চালকরা বলে এসেছে দেশে কোন আদিবাসী নেই, সংবিধান সংশোধনী বিলে তাই প্রতিফলিত হয়েছে। এতোদিন উপজাতি শব্দটি অনেকের কাছে পছন্দনীয় না হওয়ায় আদিবাসী শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। এখন সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে শুরু করে সবাই ‘আদিবাসী’ শব্দটির নতুন অর্থ বের করার চেষ্টা করছে। আদিবাসী পরিচিতির সাথে আদিবাসের সম্পর্ক খোঁজাও একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার অংশ। এই বিশেষ প্রক্রিয়াজনিত উদ্দেশ্যটি কী তা সহজেই বুঝা যাচ্ছে। 

৩. 
ঙালি জাতীয়তাবাদ বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৯- এ বলা হচ্ছে, ‘ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।’

তার মানে দাঁড়ালো 'একক সত্তাবিশিষ্ট বাঙালি জাতি' বাদে আর কেউ 'ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ' ছিল না বা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাওতাল, মনিপুরি, চাকমা, ত্রিপুরা, হাজং, গারোসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জনগোষ্টির সক্রিয় অংশগ্রহন এবং শত-সহস্র আদিবাসী শহীদ মুক্তিযোদ্ধর রক্তের কোন মুল্য থাকলো না রাস্ট্রের কাছে?

বুধবার, ১৫ জুন, ২০১১

সিরাজ সিকদারের কবিতা

পাহাড়ের
ঢাল বেয়ে
নেমে যায়
মুরং মেয়ে...
অঙ্গে তার ছোট্ট আবরণী...

কী নিটোল স্বাস্থ্যবতী!

কবে তার কাঁধে—
শোভা পাবে
রাইফেল একখানি!

বুধবার, ১ জুন, ২০১১

বাংলাদেশে কোনো 'আদিবাসি' আছে কিনা

রাস্ট্র এবং শাসকজাতি যা বলছে :

  • জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনের প্রথম সচিব ইকবাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই। তিনি বলেন, ফোরামের সদস্যরা ‘উপজাতি’ বা ‘ক্ষুদ্র জাতিস্বত্ত্বা’ শব্দগুলোর জায়গায় ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার করতে চাইছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই।
  • বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান রেডিও তেহরানকে বলেছেন, 'সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বাঙালিরাই এ অঞ্চলের আদিবাসী, অন্য কেউ নয়। একটি মহল তাদেরকে আদিবাসী বলে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার অপচেষ্টা করছে।'
  • সংবিধান সংশোধন কমিটির দশম বৈঠক শেষে কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাংবাদিকদের জানালেন, ‘আইএলওর সংজ্ঞা হিসেবে আদিবাসী বলতে যা বোঝায়, আমাদের উপজাতিদের তা বোঝায় না।’
  • ২৭ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে সাঁওতাল ছাড়া কোনো আদিবাসী নেই।

তারা যেভাবে এগুচ্ছে তাতে বাংলাদেশ হতে পারে বিশ্বের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্র। বাঙালি আদিবাসীদের আদিবাসী রাষ্ট্র বাংলাদেশ- শুনতে অবশ্য ভালই লাগছে।
রাস্ট্রব্যবস্থার রাজনৈতিক সীমানায় বসবাসের টাইমলাইন হিসাব করে আদিবাসী নির্ধারন করা ভ্রান্ত বলে মনে হয়। কেবল স্থান ও কালের প্রেক্ষাপট বিচার করলে এটি আইএলও বা বিশ্বব্যাংকের ‘ইনডিজিনিয়াস’ কথাটির ব্যাখ্যার সাথে খাপ খায়না। এমন হলে আমাদের প্রতিবেশী ভারতসহ অন্যান্য সবকয়টা দেশেই মেইনস্ট্রীম জাতিকে আদিবাসী/ইনডিজিনিয়াস বলা হতো আইএলওর সংজ্ঞাটি হুবহু তুলে ধরলাম -

“People in independent countries who are regarded as indigenous on account of their descent from the populations which inhabitated the country, or a geographical region to which the country belongs, at the time of conquest or colonization or establishment of present state boundaries and who irrespective of their legal status, retain some or all of their social, economic, cultural and political institutions.”

অন্যদিকে বিশ্ব ব্যাংক কার্যক্রম নীতিমালায় আদিবাসী/ইনডিজিনিয়াস বলতে সার্বিক স্বতন্ত্র, বিপন্ন এবং ঝুঁকিগ্রস্ত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এক জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। -

" indigenous peoples should be regarded as those with a social or cultural identity distinct from the dominant or mainstream society, which makes them vulnerable to being disadvantaged in the processes of development. Determination of a distinct identity for indigenous peoples would be based in the requirements of applicable national law and the applicability of characteristics described in paras. 8-11 above. The application of any definition of indigenous peoples should work to differentiate between indigenous peoples and other cultural and ethnic minorities for which indigenous status is not an issue; the broader protection of vulnerable groups is an issue addressed in other policies and practices of the Bank."

w4study.com থেকে বিশ্বব্যাংকের operation directive (OP) 4.10 এ উল্লেখিত আদিবাসীর সংজ্ঞাটি এখানে তুলে দিচ্ছি -

১. একটি স্বতন্ত্র আদিবাসী সংস্কৃতির অধিকারী জনগোষ্ঠী হিসেবে যারা নিজেদের মনে করেন এবং অন্যরাও এই পরিচিতির স্বীকৃতি দেন,
২. প্রকল্প এলাকায় ভৌগোলিকভাবে পৃথক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আবাসভূমি অথবা পুরুষানুক্রমিকভাবে ব্যবহৃত ভুখণ্ড এবং এতদাঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে যাদের যৌথ সম্পৃক্ততা রয়েছে,
৩. তাদের প্রথাগত সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেশের প্রধানতম সমাজ ও সংস্কৃতি থেকে আলাদা এবং
৪. যাদের একটি ভাষা রয়েছে, যা সচরাচর দেশের সরকারি ভাষা বা ওই অঞ্চলের প্রচলিত ভাষা থেকে পৃথক।

উইকিপিডিয়াতে বিশ্বব্যাংকের পলিসি উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে- " Because of the varied and changing contexts in which Indigenous Peoples live and because there is no universally accepted definition of “Indigenous Peoples,” this policy does not define the term. Indigenous Peoples may be referred to in different countries by such terms as "indigenous ethnic minorities," "aboriginals," "hill tribes," "minority nationalities," "scheduled tribes," or "tribal groups.

এইসব সংজ্ঞা ধরে এগিয়ে মুলধারার বাঙালি জাতিকে কোনভাবেই আদিবাসী ধরা যায় না। তার নিজেরাই রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এবং সংস্কৃতিগতভাবে এই অঞ্চলের মেইনস্ট্রিম বা ডমিনেন্ট গ্রুপ। এবং বলতে গেলে তারাই এখন এদেশে বসবাসরত অন্যান্য বৈচিত্রময় সংস্কৃতির ধারক বিভিন্ন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির ( যাদেরকে রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি থেকে খুব সহজেই আলাদা করা যায়) অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে।

শনিবার, ১২ মার্চ, ২০১১

ভূমির অধিকার বিষয়ে রা নেই কারো

 
মুল সমস্যাটা তো ভূমির অধিকার ও মালিকানা নিয়েই। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবিই করে আসছে পাহাড় ও সমতলের জাতিসত্তাগুলো। স্বায়ত্বশাসনের ধারনাটিও এসেছে ভূমি অধিকারের প্রশ্ন থেকে। সেই ব্রিটিশ যুগ থেকে শুরু করে নানান সময়ে জারি করা রেগুলেশন, ম্যানুয়াল, আইন ও প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের অধিকার ও অস্তিত্তকে রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ অবস্থানে দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে। নানান সময়ে দাবী তুলেছে আদিবাসিরা কিন্তু কোন সরকারই সেদিকে খেয়াল রাখেনি বরং কুটকৌশল, আইনের বেড়াজালে ও বলপ্রয়োগ করে সংকুচিত করেছে তাদের জীবন জীবিকা। শান্তিচুক্তির মুলা দেখিয়ে বিদ্রোহদমন করে প্রতারনা করেছে। দমন নিপীড়ন জবরদখল উচ্ছেদ এখনও থেমে নেই। শতবর্ষ ধরে প্রাকৃতিক বনভূমিকে নিজের বলে আবাদ করে আসছে যে আদিবাসি চাষা, তার কাছে কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে। সেতো কখনো এগুলি দেখেনি, এগুলি ছিলও না তখন। সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদানেরর বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ কারণ রাষ্ট্রের মানসিকতা পরিবর্তন না হলে সংখ্যাগুরুর মানসিকতা পরিবর্তন সম্ভব নয়। সংখ্যায় ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে আপনি একটি জাতিকে যখন উপজাতি বলেন, তখন সেই জাতির মানুষগুলোও সবার চোখে উপ-মানুষে পরিণত হন। এসবকিছুর সমাধান যারা করতে পারে তারাই জল্লাদের ভুমিকায় অবতীর্ণ হলে আপনি আমি আলোচনা করে কি করতে পারি?