বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০০৯

বাঙালীভিন্ন অন্য জাতিরা 'উপজাতি' বা 'আদিবাসী' কেন? কেন ভিন্ন 'জাতি' নয়?

১.
চাকমা, মারমা, মান্দি, বম, সাঁওতাল, মণিপুরী ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠীগুলো এখনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়নি। তাদেরকে এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে চিহ্নিত করা হয় 'উপজাতি' হিসাবে গভীরার্থে যেটা মোটা দাগে রেসিয়াল ডিসক্রিমিনেশান। নদীর শাখাকে উপনদী বলা হয় ঠিকাছে কিন্তু বাংলাদেশের বসবাসকারী প্রান্তিক জাতিগুলো কি বাঙালী জাতির শাখা নাকি তাদের ভাষাগুলো বাংলার উপভাষা? ভিন্ন জাতি হতে পারে, 'জাতি'র 'উপ' হয় কিভাবে? সংখ্যায় কম এবং দুর্বল হলে সেই জাতিকে কি উপজাতি বলা যায়?

২.
সম্প্রতি আবার এসব জনজাতিদের 'আদিবাসী' বলেও পরিচিত করে তোলার একটি প্রক্রিয়া চলছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে জাতিসংঘের আদিবাসী দিবস, আদিবাসী বর্ষ ইত্যাদি বিয়য়কে পুঁজি করে এনজিওগুলোর আরেক বাণিজ্যিক আয়োজন। সমান্তরালে 'আদিবাসী' না 'উপজাতি' হবে তা নিয়েও বিতর্ক দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ যুক্তি দেখাচ্ছেন বাঙালীরাই এ অঞ্চলের আদিবাসী। ক্ষুদ্রজাতিসত্তাগুলো কিন্তু কখনোই তাদেরকে সামষ্টিকভাবে উপজাতি, আদিবাসী বা বলা হোক বলে দাবী করেনি। এ শব্দগুলো বাঙালী ভিন্ন অন্যদের তৈরী করা নয়, এগুলো বাংলা ভাষাতেই সৃস্ট হয়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কখন কবে কিভাবে বাংলাভাষায় এসব শব্দবন্ধ প্রবেশ করল সেটার ব্যাখ্যা হয়তো ভাষাবিজ্ঞানীরা দিতে পারবেন।

৩.
এভাবে উপজাতি বা আদিবাসী হিসাবে পরিচয় করানোর এই রাস্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক আয়োজনে অনেকেরই জাতিগত পরিচয় বিলীন হয়ে যায়। একজন খাসিয়া, একজন বম, একজন মণিপুরী সকলেরই ভিন্ন জাতিগত পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উপজাতি বা আদিবাসী হলো মনুষ্য প্রজাতির সেই শাখা যারা ফুল-ফল লতা-পাতায় সজ্জিত হয়ে অরণ্য থেকে অরণ্যে চলাচল করে - এই ডিসকোর্স আজ প্রতিষ্ঠিতই বলা যায়।

৪.
যে বিষয়টি বিপজ্জনক সেটি হলো এই, এই ডিসকোর্স প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম এবং প্রকাশনাগুলোতে কথিত 'উপজাতি'দের জীবন প্রণালী, ভাষা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য সবকিছু ব্যাখ্যা করা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে। পাঠ্যবইগুলোতে প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠীগুলো সম্বন্ধে যথাসস্ভব অদ্ভুত তথ্য হাজির করে বাচ্চাদের এন্টারটেইন করা হয়। বাংলাপিডিয়ায় লেখা হচ্ছে 'উপজাতিরা লোহা ছাড়া সব খায়' জাতীয় তথ্য। এসব দেখে স্পস্ট হয় রাষ্ট্রের নিকট ভাষিক সংখ্যালঘূ বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর নিম্নতম গুরুত্ব নেই, কেবল জাতিসংঘ ও দাতিগোষ্ঠীগুলোর চাপ এবং বহির্বিশ্বে নিজেদের ভাবমুর্ত্তি ধরে রাখার জন্য কোটা জাতীয় কিছু সুবিধা চালু করেছে।

৫.
উপজাতি বা আদিবাসী জীবনের মানে কি ক্রমাগত রাষ্ট্র, শোষকশ্রেণী এবং অধিকর্তা জাতির বঞ্চনা ও দমননীতির কাছে পদে পদে নিগৃহীত হওয়া?

------------------------------------------------------------------------------------------------
**আপডেট জুন ১ ২০১১*** লেখাটি যখন লিখি তখন পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন ছিল। দেশ এতদিনে বহুদুর এগিয়ে গেছে। রাস্ট্র এবং শাসকজাতি এখন বলছে বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নাই, এই দেশে আদিবাসী হলো বাঙালি।