শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১১

আজ গোকুলানন্দ গীতিস্বামীর জন্মদিন



আজ ২৬ নভেম্বর বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সাহিত্যের পথিকৃৎ গোকুলানন্দ গীতিস্বামীর (১৮৯৬ -১৯৬২) জন্মদিন। গোকুলানন্দ মুলত ছিলেন একজন চারণকবি। তৎকালীন মণিপুরী সমাজের শিক্ষিত একটি বৃহদাংশ যখন সাহেবি এবং বাঙালি চালচলন রপ্ত করতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় মাতৃভাষায় নানান কবিতা, গান, গীতিপালা লিখে সেগুলোর পরিবেশনা নিয়ে ঘুরতেন গ্রাম থেকে গ্রামে। নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি শিল্প সবকিছু বিস্মৃত হয়ে এই সমাজ যখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হবার দ্বারপ্রান্তে, তখন গীতিস্বামী সক্রেটিসের মতো নতুন আশার, নতুন সম্ভাবনার বাণী ঘরে ঘরে ফেরী করে বেড়িয়েছেন ক্লান্তিহীনভাবে। তিনি দেখিয়েছেন,এই ভাষা এই সংষ্কৃতির ভেতরেও বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। শুধুমাত্র লোকমুখে প্রচারিত এই দরিদ্র ভাষাটি দিয়েও রচিত হতে পারে উৎকৃষ্ট সাহিত্য, শিল্পরস। তিনিই সর্বপ্রথম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ভেতর জাতীয়তাবোধ ও মাতৃভাষার প্রতি চেতনা জাগ্রত করেন।

গান গেয়ে সমাজকে জাগানোর দ্বায়িত্বে স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নেন, পাশাপাশি চলে নাট্যপালা মঞ্চায়ন। সমাজ রাজনীতি বিষয়ে গোকুলানন্দের জ্ঞান ও মতাদর্শ ছিল স্বচ্ছ ও শক্তিশালী। গোঁড়ামি ও পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে তার অবস্থান গানে গানে স্পষ্ট করেন। এজন্যে কম লাঞ্ছনা গঞ্জনা সইতে হয়নি গোকুলানন্দকে। সমাজের উচ্চশ্রেণীর ব্যক্তিরা যারা তাকে একসময় 'পাগল', 'কাক' ইত্যাদি বিশেষনে অভিহীত করেছে, তারাই একসময় তাকে "গীতিস্বামী" নামক সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত করতে বাধ্য হয়েছে।

গোকুলানন্দের জন্ম বর্তমান মৌলবীবাজার জেলার কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নের জবলারপার নামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে, ১৮৯৬ সালের ২৬ নভেম্বর তারিখে। বাংলাদেশ ভারত দুদেশেই মণিপুরী সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয় এই সমাজবিপ্লবী গীতিকবি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সমাজ নিয়ে অসংখ্য সমাজ-সংস্কারমুলক গান, কবিতা এবং নাটকের পাশাপাশি নীতিশাস্ত্র বা চরিত্র গঠনমুলক নানান বাণী রেখে গিয়েছেন। একটি অনগ্রসর কৌম সমাজের জন্য তাঁর এসব আধুনিক বাণী কাজ করেছে শানিত অস্ত্রের মতো।

শুভ জন্মদিন গোকুলানন্দ!